বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজ

Spread the love

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে কোনো অশুভ ছায়া কি ঘিরে ধরে বাংলাদেশকে! নইলে বারবারই কেন ওখানে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে যেতে হয়? যেন দুর্বোধ্য কোনো ধাঁধা লুকানো গায়ানা-অ্যান্টিগা-বারবাডোজ-জ্যামাইকার উইকেটগুলোর নিচে। জট খুলতে পারেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, বোলাররা থই পান না ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের দানবীয় আগ্রাসনের সামনে। টেস্ট সিরিজে এবারও সেই নাকানিচুবানি। তবে ওয়ানডের বাংলাদেশ দলটা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। গায়ানায় আজ সন্ধ্যা ০৭.৩০ শুরু তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ তাই আশা নিয়েই শুরু করবে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশ।

কাল অনুশীলনে নামার আগে মাশরাফির কণ্ঠে সেই আত্মবিশ্বাসের অনুরণন, ‘আশা করি, এখানে আমরা ভালো করব। ওয়ানডে আমরা ভালো খেলি। নতুন কিছু খেলোয়াড় এসেছে দলে। যারা এসেছে, যারা ছিল সব মিলিয়ে কম্বিনেশনটাও ভালো।’

টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই, ৪৩ রানে অলআউট হয়ে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানের সঙ্গেও দেখা হয়ে গেছে সফরের শুরুতেই! দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের সুবাদে সীমিত ওভারেও ধরাশায়ী হওয়ার স্বাদ বড় টাটকা। শেষ কবে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল, সেটা খুঁজতে গেলেও স্মৃতিশক্তিতে কুলানো কঠিন। সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজটা মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিতেছিলেন সেই ২০১৬ সালে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বুকে সাফল্যের কথা মনে করতে গেলে তো পিছিয়ে যেতে হয় প্রায় এক দশক। ২০০৯ সালের টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ জেতা সেই সফর সেখানেও অবশ্য পূর্ণ তৃপ্তি নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসল দলটা খেললে যে সেবারও বাংলাদেশ দল অসহায় আত্মসমর্পণ করত না, সেটা কে বলতে পারে! বোর্ডের সঙ্গে ক্যারিবীয় খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের কারণে সিরিজটা বাংলাদেশ খেলেছিল দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে।

ওয়ানডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভাবলে তাই ২০১৪ সালের দুঃসহ হোয়াইটওয়াশকেই আগে মনে পড়বে। সেবার প্রথম ম্যাচটিতে তবু লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু বাকি দুই ম্যাচের হারের ব্যবধান যথাক্রমে ১৭৭ ও ৯১ রানের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তো গেইল-ব্রাভো-রামদিনদের ২৪৭ রানের সামনে মাত্র ৭০ রানে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তামিম-সাকিব-মুশফিকরা।

সেবারের ধবলধোলাইয়ের লজ্জার গাদায় আঁতিপাঁতি করে খুঁজলে একটাই চেহারা কেবল ভাসে, ডানহাতি ওপেনার এনামুল হকের। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি। অবশ্য সেটাই হয়ে আছে তাঁর নিজেরও সর্বশেষ সেঞ্চুরি। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে আবারও আশাবাদী হয়ে উঠতে পারেন এনামুল। ক্যারিয়ারের তিন সেঞ্চুরির দুটিই যে করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে! এবার সেখানেই ৪ নম্বর সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে পারলে দলেরও লাভ। এনামুলের জন্যও হয়ে যায় নিজেকে নতুন করে মেলে ধরার কাজটা। চোট কাটিয়ে ওয়ানডে দলে যোগ দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। স্বরূপে থাকলে ওয়ানডে দলের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন তিনিও। অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে ক্রিস গেইল-এভিন লুইসদের প্রতি সমীহ, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের আউট করা খুব কঠিন হবে। তবে আমরা চেষ্টা করব, ঠিক জায়গায় বল করে ওদের দুর্বলতা কাজে লাগাতে।’

সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বের প্রথম অধ্যায়ের শুরুটা হয়েছিল ২০০৯-এর সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। ৯ বছর বাদে, দ্বিতীয় দফা অধিনায়কত্বের অভিষেকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটের ফলটা রঙিন হয়নি। ওয়ানডেতে তিনি অধিনায়ক নন বটে, তবে রাহু কাটানোর সবচেয়ে বড় মন্ত্র তো তাঁর হাতেই।
স্ত্রীর অসুস্থতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবেন কি যাবেন না করে শেষমেশ সেখানে পৌঁছেই গেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তর্কাতীতভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্র। তিনি থাকলে নাকি বদলে যায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের আবহ। ক্যারিবীয় দুঃস্বপ্নমোচনের শুরুটা না হয় হোক সেটি দিয়েই। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সামর্থ্য তো প্রমাণ হয়েছে বারবারই, কখনো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে, কখনো বা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে।

হারে হারে দিগ্ভ্রান্ত বাংলাদেশ দল। সবকিছুতেই এখন শুধু আশা দেখা ছাড়া আর কীই-বা করার আছে।

 

View in Facebook

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *