ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বুধবার বলেছেন আসামের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব যাচাই সংক্রান্ত তালিকা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার ফর সিটিজেন (এনআরসি)’র নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইস্যুটি বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যমান সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি। ভারতীয় হাইকমিশনে সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এনআরসি প্রসঙ্গে কথা বলেন ভারতীয় দূত। বার্তা সংস্থা ইউএনবির রিপোর্ট মতে, সেখানে হাইকমিশনার শ্রিংলা বলেনÑ এনআরসি একটি প্রক্রিয়া। যাচাই-বাছাই’র ওই প্রক্রিয়া থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের বিষয়টি এখনও চলমান। প্রক্রিয়াটি এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
এ নিয়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা যাতেবিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আসাম রাজ্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে। ভারত সরকার মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ নিয়ে কাউকে হয়রানি করা হবে না এবং কাউকে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না।
এতে আরো বলা হয়, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এনআরসি প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করেছে। এটা ভারত সরকারের কোন সিদ্ধান্ত নয়। আদালতই প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে। এটা কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেছেন, কাউকে বন্দী শিবিরে রাখার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া, এনআরসি খসড়ায় নাম না থাকা মানুষদের বিদেশি বলে বিবেচনা করা হবে না।
বিবিসি’র রিপোর্ট মতে, আসামের নাগরিকদের তালিকায় ঠাঁই পাননি রাজ্যের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। যাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। দেশটির উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে গত ৩০শে জুলাই আমামের নাগরিকদের ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে আসাম প্রশ্নে এখনো বাংলাদেশ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তালিকা প্রকাশের পর বাংলাদেশের বিদেশনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক ও কার্যকরি পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। সেই সব বৈঠকে দিল্লির তরফে আসাম ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে কিছু না বলার আগ পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোর নীতি নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা এটা নিশ্চিত করেছেন যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত কোনো পর্যায়েই আসাম ইস্যুটি আসেনি। এটি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়- ঢাকার তরফে আগে যেমনটি বলা হয়েছে এখনো তাই বলা হচ্ছে। আসাম প্রশ্নে গত ২৩শে জুলাই নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মেয়াজ্জেম আলী ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, নাগরিকত্ব ইস্যুটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবেই মনে করে বাংলাদেশ। এরপর কলকাতায় হাইকমিশনার মিস্টার আলী ফের সাংবাদিকদের বলেনÑ এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের কোনো পর্যায়ে (না রাজনৈতিক না কর্মকর্তা লেভেলে) আলোচনায় বিষয়টি ওঠেনি। তাই ভারতের অভ্যন্তরীণ এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো কথা বলতে চায় না বা হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বাংলাদেশের দূত মিস্টার আলী এ-ও বলেন বিষয়টি তখনই দ্বিপক্ষীয় হবে, যদি ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু বলে বা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যখন বিষয়টি আসবে তখনই এ নিয়ে কথা বলা উচিত হবে বলে মনে করে ঢাকা।